আজকে যে বিষয়টি নিয়ে লিখবো তা হচ্ছে মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের অবক্ষয় যা আমাদের পুরো সমাজকে ঘুনপোকার মত খেয়ে ফেলেছে!অবক্ষয়ই হচ্ছে এই ঘুনপোকা।যে ঘটনাটি আমাকে এ বিষয়ে লিখতে বাধ্য করছে তা খুবই মর্মান্তিক..
এ ঘটনার দুটি চরিত্র, রোহান আর তরনী!
তারা ছোটবেলা থেকেই একটি অভিজাত কোএডুকেশন স্কুলে পড়ছে।দুজনে পড়ালেখায় খুব ভাল।দুজনে বন্ধু। এভাবেই তারা “O”লেভেল পাশ করলো..মেয়েটি খেলাধুলা, ডিবেট ইত্যাদি কার্যক্রম ও খুব ভাল করে।ভীষন উচ্ছল ও প্রানবন্ত একটি মেয়ে। A লেভেল পড়ছে এক সাথেই..এর মধ্যে দুজনের বন্ধুত্ব রুপান্তরিত হয়েছে ভালবাসায়! এক সময় তাদের A-লেভেল পরীক্ষাও শেষ হল..এই সময়টা দুজনে কাটাচ্ছে ঘুরে ফিরে।এরই মধ্যে মেয়েটি একদিন ছেলেটির বাসায় গেল..আসা যাওয়া ছিলই। সে সময় বাসায় কেউ ছিল না। তরনী একা রোহানের রুমে।খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভালবাসার সম্পর্কে জড়ালে তারা কাছে আসবেই..তরনী কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিল,বলছে সেটা কিন্তু রোহান মানতে চাইছে না! রোহান জোর করছে..তরনী বার বার বাঁধা দিচ্ছে! কিন্তু রোহান মানছে না,এক সময় আকুতি জানালে কেঁদে ফেললো এরপর চিৎকার করলো..বাসায় কেউ নেই! তরনীর সেই চিৎকার সেই আকুতি ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রইল!আর তরনীর সব বিশ্বাসকে খুন করে রোহান তাকে রেপ করলো…তরনী বোবা হয়ে গেল..কান্না থেমে গেল! বুঝছে না কি করবে!এই বিশ্বাস নিয়ে সে রোহানকে ভালবেসে ছিল? বাসায় ফিরলো..মেনে নিতে পারছে না যাকে ভালবাসে তার হাতেই সে লাঞ্ছিত হল!
শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে ধুয়ে ফেলতে চাইল সব লাঞ্ছনা ..চোখের পানি গড়িয়ে গেল অঝোরে! কিন্তু ভিতরে যে বিশ্বাস খুন হয়ে গেছে, সে নিগৃহীত হয়েছে, তা কিভাবে মুছবে! বেরিয়ে পাথরের মত বসে রইলো অনেক্ষণ! মা এলেন, বললেন, কি হয়েছে ! মাকে কিছুই বলতে পারলো না..কিন্তু তরনীর ভিতরের যে ভাংচূর যে রক্তক্ষরন তা থামাবে কে? কিছুতেই মানতে পারছে না ..রাত পেরিয়ে সকাল গড়িয়ে গেল..মা ঘরে এলেন,নাস্তা খেতে ডাকলেন! মা রান্না ঘরে গেলেন ..এর মধ্যেই তরনী ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে ছয় তলার ছাদে চলে গেল!
তারপর ছাদের দেয়াল থেকে নেমে সোজা কার্নিশে দাঁড়িয়ে গেলো! নিচের থেকে দারোয়ান দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলো.. তরনী শুনলো না!দারোয়ান ইন্টারকমে ..ফোন দিল! ওর মা জানতে পেরে পাগলের মত ছাদে গেলেন..তরনীকে কাঁদতে কাঁদতে বললেন উঠে আয়,উঠে আয়.. কিন্তু তরনী তখন সব ঘৃনা,সব ক্ষোভ,বিশ্বাস হারানোর বেদনা,আত্ম সম্মানে আঘাত সব ঝেরে ফেলার জন্য তৈরি!কোন ডাকই সে শুনতে পেলো না। সে তার গভীরতম বিশ্বাস,ভালবাসা,আত্মসম্মান,মূল্যবোধ সব কিছু বুকে নিয়ে ঝাপ দিলো! মুহূর্তের মধ্যে এই পৃথিবীর মান চিত্র থেকে নাই হয়ে গেল একটি ফুলের মত মেয়ে..
কি বলার আছে আমাদের! কি বলবো আমরা তরনীকে ! এমন আরো তরনী আছে যারা অসম্মানের হাত থেকে বাচঁতে আত্মহননের পথ বেছে নেয়..
আমার সবিনয় অনুরোধ অভিবাবকদের কাছে ..আপনারাই পারেন এই তরুন প্রজন্মকে সঠিক পথটি দেখাতে! খেয়াল করুন ছেলে মেয়েরা কি করছে! মূল্যবোধ,সম্মানের বোধটি গড়ে উঠে ঘরের থেকে..মূল্যবোধের সঠিক অর্থ জানাতে হবে! একজন নারী বা মেয়ের প্রতি সম্মানের জায়গাটি তাকে বোঝাতে হবে।বিশ্বাস কি গভীরতম বোধ তাকে বোঝাতে হবে..তাহলে তৈরি হবে না আরেকটি রোহান। উভয়কে বোঝাতে হবে সম্পর্কের সীমারেখা কোথায়!এটি পারবে শুধু অভিবাবকরা।ব্যক্তি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিস নয়, এটা নিজেদের বুঝতে হবে তাদেরকেও বোঝাতে হবে।আপনারা দেওয়া অঢেল ব্যক্তি স্বাধীনতা আপনার সন্তানকে ভয়ংকর বিপদে ফেলতে পারে এটা বুঝতে হবে এবং তাদেরকেও বোঝাতে হবে! ধর্মীয় অনুশাসন এ ক্ষেএে অনেক প্রভাব ফেলবে কারন ধর্মীয় অনুশাসন সঠিক পথই দেখায়!
পুনশ্চ:
আত্মহনন শেষ কথা নয়..জীবনে খারাপ ঘটনা ঘটে তার সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে তার জবাব দিতে শেখাতে হবে!হার,জিত, সাফল্য,অসাফল্য জীবনে থাকবেই!তাই মানসিক ভাবে তাদের প্রস্তুত করতে হবে তার সামনা সামনি হবার। তোমার জীবন সব চাইতে মূল্যবান..এটা তাদের বোঝাতে হবে। এ প্রজন্ম তোমরা অন্যের প্রতি সম্মান ,মূল্যবোধ,গভীরতম বিশ্বাস বুকের মধ্যে ধারন করো তাহলেই বেঁচে যাবে এই অবক্ষয় নামের ঘুনপোকা থেকে আগামী সমাজ আগামী পৃথিবী …..

Fouzia Yasmin Eva has completed her graduation from the Department of History, University of Dhaka. She is one of the valuable content contributors of Pensive Stories.
These kind of circumstances are unavoidable these days. Specially for guys it has become a regular game. I totally agree with the author about religious disciplines. Very well written and after all it’s the fact!